
রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি;
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলায় আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা বা শিক্ষক কে কোন কেন্দ্রে প্রিজাইডিং, পোলিং এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সেই বিষয়ে লিস্ট তৈরি করে নির্বাচন কর্মকর্তাকে ইমেইল পাঠিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় পর উপজেলা জুড়ে বিভিন্ন মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলায় বিভিন্ন কেন্দ্রে নির্বাচনে দ্বায়িত্ব পালনের তালিকা তৈরির কারিগর উপজেলার ‘মানশ্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের’ প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রধান শিক্ষক রানা আসিফ। এর আগেও শিক্ষক রানা আসিফ নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিভিন্ন পন্থায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটিতে সদস্য হয়েছেন বলে জানা যায়।
নির্বাচনে দ্বায়িত্ব পালনে উপজেলার তালিকা তৈরি করে পাঠানোর বিষয়টি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মোহনগঞ্জ উপজেলার মোট ৫৫টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। রানা আসিফ নিজেই উপজেলার কোন ভোট কেন্দ্রে কোন কর্মকর্তা বা শিক্ষক প্রিসাইডিং ও পোলিং এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সেই তালিকা তৈরি করেন। পরে সেই তালিকা ই-মেইল করে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে পাঠান। তার এই কর্মকান্ডে চরম ক্ষিপ্ত হন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। এ নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও বিভিন্ন মহল থেকে নানা তদবির করিয়ে সেই চেষ্টা আটকে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলছেন, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ছাড়া একজন শিক্ষক এমন তালিকা তৈরির এখতিয়ার রাখেন না। এমন কাজ করে রানা আসিফ নির্বাচন আইন বহির্ভূত কাজ করেছেন। এটি সম্পূর্ণ বেআইনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজন প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয় কয়েকজন বলেন, শিক্ষক রানা আসিফ সবসময়ই বিতর্কিত কাজকর্ম করে থাকেন। তিনি শিক্ষকতার চেয়ে রাজনীতিই বেশি করেন। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুকে) পোস্ট দেন। তবে তিনি নির্বাচনের দ্বায়িত্বের তালিকা তৈরি করে পাঠাতে পারেন না। এটা তার এখতিয়ার বহির্ভুত। এ বিষয়ে প্রশাসনিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত রানা আসিফ বলেন, আমাদের যেহেতু মহিলা শিক্ষক বেশি তাই কাকে কোথায় দিলে ভালো হয় সে বিষয়ে একটা তালিকা পাঠিয়েছি। শিক্ষক নেতারা প্রতি নির্বাচনেই এমনটা করেন। এবার যেহেতু আমার দেওয়া তালিকা গ্রহণ করা হয়নি। এ বিষয়ে আমার আর কিছু বলার নেই।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক বলেন, পুরো উপজেলার কোন কেন্দ্রে কোন কর্মকর্তা ভোট গ্রহণের দায়িত্ব পালন করবেন। এ তালিকা তৈরি করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটানিং কর্মকর্তা। একজন শিক্ষক এ তালিকা তৈরি করে পাঠানোর কোন এখতিয়ার নেই। রানা আসিফ যেটা করেছেন সেটা অন্যায়। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তবে কে কি পাঠাল এ নিয়ে আমার গুরুত্ব দিচ্ছি না। আমরা আমাদের মতই কাজ করছি।
উপজেলা শিক্ষা
আবুল হোসেন বলেন, ওই শিক্ষক শুধুমাত্র নিজে কোন কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবেন সেই বিষয়ে নির্বাচন অফিসে রিকুয়েস্ট করতে পারেন। উপজেলার সবার তালিকা তিনি তৈরি করে দিতে পারেন না। এটা তার এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ।
বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত করলে মোসা. নাফিজা জেসমিন বলেন, এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।