
হুমায়ূন কবীর ফরীদি, স্টাফ রিপোর্টারঃ
রসে টইটম্বুর ও গুনে ভরপুর “জাম্বুরা” ফলের ক্রয়-বিক্রয় জগন্নাথপুরে জমজমাট ভাবে চলছে। তবে গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে দ্বিগুণ গুন মূল্যে এই ফলটি স্বাচ্ছন্দ্যে জনসাধারণ ক্রয় করছেন।
সবুজ রংয়ের মোটা খোসাযুক্ত লম্বা দানাদার রসে টইটম্বুর ও গুনে ভরপুর জাম্বুরা ফল। টক-মিষ্টি মুখরোচক সবার প্রিয় ফলটি বর্ষার শেষে আর শীতের মধ্য ভাগে মৌসুমী এই ফলটি বছরের চলতি সময়ে বাজারের অলি-গলিতে চোখে পড়ে। নুন, লঙ্কা, রসুন আর চিনি মিশিয়ে এর চাটনি যেমন অলস দুপুরের সঙ্গী হয়। ঠিক তেমনি গরমে তৃষ্ণা মেটাতে জাম্বুরা ফলের শরবতের জুড়ি নেই। অঞ্চল ভেদে এই ফলটি ভিন্ন ভিন্ন নামে লোকজনের মাঝে পরিচিত রয়েছে যেমন, বাতাবি লেবু, বাদামি লেবু, ছোলম, বড় লেবু ও জাম্বুরা নামে পরিচিত। ৩ রা অক্টোবর রোজ মঙ্গলবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে ও জানাযায়, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা সদর বাজার, কলকলিয়া বাজার, চিলাউড়া বাজার, ভবের বাজার, মীরপুর বাজার ও কেইনবাড়ী বাজার সহ সবকটি হাটবাজারে পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতারা জাম্বুরা ফসরা সাজিয়ে বিক্রি করছেন। গত মৌসুমে যে জাম্বুরা প্রতি পিস ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে ঠিক একই আকারের প্রতি পিস জাম্বুরা ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের মাঝে দামের চাপ নেই, স্বাচ্ছন্দ্যে ক্রয় করছেন।
এ ব্যাপারে আমিরুল, শেলিম, সাজন, মিজান ও দীপু সহ একাধিক ক্রেতা তাদের অভিপ্রায় ব্যক্ত করতে গিয়ে বলে, জাম্বুরা একটি সুস্বাদু ফল। এই ফল সবসময় পাওয়া যায়না। গরমের সময় খেতে খুব ভাল লাগে। চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে জাম্বুরা ফলে ঔষধী গুণাবলী রয়েছে। অনেক রোগের জন্য উপকারী। তাই ফলটি পরিবার নিয়ে খাচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে তারা আরো বলেন, গত বছরের তুলনায় দাম দিগুন তাতে কি? সব জিনিসেরই দাম বেশি। তাইতো দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি পরিপক্ব জাম্বুরা থেকে ভিটামিন-এ, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, বায়োফ্লাভোনয়েডস, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, হেলদি ফ্যাট, প্রোটিন এবং এনজাইমসের মতো নানা পুষ্টিগুণ যেমন মিলে তেমনি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও এর জুড়ি নেই। জ্বর, ঠান্ডা কিংবা কাশির মতো সমস্যাতেও জাম্বুরা ম্যাজিকের মতো কাজ করে। এ ছাড়া যাদের দাঁতের ব্যথার সমস্যা আছে তাদের জন্যও জাম্বুরা খুবই উপকারী একটি ফল। এ ছাড়া জাম্বুরাতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে পাশা-পাশি হার্ট ভালো রাখতেও সহায়তা করে। অন্যদিকে করোনাভাইরাস মহামারির সময়েও জ্বর, ঠান্ডা, কাশি থেকে আপনাকে সুরক্ষিত রাখতে পারে এ মৌসুমি ফলটি। তবে যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে জাম্বুরা খাওয়ার বেলাতে কিছু বিষয় মাথায় রাখা আবশ্যক। অনেক বেশি পরিমাণে না খেয়ে দুপুরের খাবারের পরে জাম্বুরা আপনি খাবার তালিকায় রাখা যেতে পারে। অন্যদিকে যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা আবার খুব সহজেই বেছে নিতে পারেন এ মুখোরোচক ফলটি। জাম্বুরার এসব গুণাবলি ছাড়াও মুখের রুচি বাড়াতে, পেটের সমস্যা দূর করতে কিংবা যারা ডায়েটে আছেন তারাও বেছে নিতে পারেন এ ফলটি। অনেকেই আবার প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বক ভালো রাখতে চান। তাদের ক্ষেত্রে জাম্বুরা ত্বক উজ্জ্বল করতে, ব্রণের সমস্যা দূর করতে বেশ কার্যকর। অন্যদিকে শরীরে থাকা মৃত কোষ কিংবা ভাইরাসের মতো জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করতেও জাম্বুরার তুলনা নেই। এ ক্ষেত্রে ক্যানসারসহ যাদের ইউরিনের সমস্যা আছে তাদের জন্যও জাম্বুরা উপকারী একটি ফল। তাই স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের জন্য জাম্বুরা হতে পারে খুব সহজ একটি সমাধান এবং এমন একটি মৌসুমি ফল যাতে আপনি একদিকে যেমন ভিটামিন, পটাসিয়াম, মিনারেল পাবেন তেমনি আপনার মুখের স্বাদে বৈচিত্র্য আনতেও সহায়তা করবে এ ফলটি।স্বাদে কিছুটা টক-মিষ্টি সাইট্রাস ফল জাম্বুরাআমাদের সবার পরিচিত এবং অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি ফল।অন্যান্য সাইট্রাস ফলের ন্যায় জাম্বুরাতে উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন-সি এবং ভিটামিন-বি রয়েছে।
জাম্বুরা উচ্চ পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন এবং ফোলিক এসিডের উৎস।আর,এই দুটি উপাদানই গর্ভবতী মায়েদের জন্য উপকারী
জাম্বুরাতে থাকা ভিটামিন-সি দাঁতের ব্যাথা দূর করতে এবং দাঁতের মাড়ি শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।জাম্বুরাতে রয়েছে সাধারণ ঠাণ্ডা,জ্বর বা কাশি দূর করার প্রাকৃতিক রেমেডিস।সুতরাং,একটু জ্বর,কাশি বা ঠাণ্ডা হলেই যারা মুঠো ভর্তি মেডিসিন খেয়ে অভ্যস্ত তারা জাম্বুরা খেলে খুব দ্রুত উপকার পাবেন। জাম্বুরাতে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে পটাশিয়াম যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করতে এবং হার্টকে ভাল রাখতে জরুরী।এছাড়া, জাম্বুরাতে উচ্চ পরিমাণে পেক্টিন রয়েছে যা আর্টারিয়াল ডিপোজিট ক্লিয়ার করতে সাহায্য করে।ফলে,হার্ট সুস্থ থাকে। পানি পানের অভাব,ডিহাইড্রেশন এবং ইলেক্ট্রলাইটস ইম্ব্যালেন্সের কারণে আমাদের মাসেল ক্রাম্প হয়।আর,যাদের প্রায় মাসেল ক্রাম্প অর্থাৎ পেশীতে টান লাগে,তারা নিয়মিত জাম্বুরা বা জাম্বুরার রস খেতে পারেন।জাম্বুরা বেশ ভাল পরিমাণে ইলেক্ট্রলাইটস এবং তরল সরবরাহ করতে পারে। জাম্বুরাতে থাকা ভিটামিন-সি আয়রন শোষণে সাহায্য করে,ফলে যারা এনিমিয়া বা রক্ত স্বল্পতাতে ভুগছেন তারা প্রতিদিন অন্তত ১ কাপ জাম্বুরা খান। ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে
যাদের দেহে উচ্চ পরিমাণে ইউরিক এসিড আছে তারা নিয়মিত জাম্বুরা খেলে ইউরিক এসিডের মাত্রা স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে।
বয়সের ছাপ দূর করে নিয়ম করে প্রতিদিন এক গ্লাস জাম্বুরার জুস খেলে স্কিন এবং চুলের স্বাস্থ্য ভাল থাকে।জাম্বুরার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সেল ড্যামেজ প্রতিরোধ করে।ফলে,বয়সের ছাপ দূর হয়।এছাড়া,জাম্বুরাতে রয়েছে চুল থাকে সুস্থ এবং সুন্দর। জাম্বুরাতে উচ্চ পরিমাণে বায়োফ্লাভোনয়েডস রয়েছে যা ব্রেস্ট ক্যান্সার,কোলন ক্যান্সার এবং অগ্নাশয়ের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।পাশাপাশি,দেহের বিভিন্ন স্থানে ক্যান্সার ছড়িয়ে যাওয়া রোধ করে।যাদের দেহে এল ডি এল বা ব্যাড কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি তাদের জন্য জাম্বুরা ভীষণ উপকারী।জাম্বুরাতে থাকা ফাইবার কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।এছাড়া,এই ফাইবার ওজন কমাতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতেও সমান উপকারি।